আকাইদ ও নৈতিক জীবন সাজেশন
রিসালাত : রিসালাত শব্দের আভিধানিক অর্থ বার্তা, চিঠি পৌঁছানো, পয়গাম, সংবাদ বা কোনো ভালো কাজের দায়িত্ব বহন করা। ইসলামি পরিভাষায়, মহান আল্লাহ তায়ালার পবিত্র বাণী মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বকে রিসালাত বলা হয়। যিনি এ দায়িত্ব পালন করেন তাঁকে বলা হয় রাসুল।
আসমানি কিতাব : কিতাব শব্দের অর্থ লিপিবদ্ধ বা লিখিত বক্তব্য। এর প্রতিশব্দ হলো গ্রন্থ’, পুস্তক, বই ইত্যাদি। আসমানি কিতাব হলো এমন গ্রন্থ’ যা আল্লাহ তায়ালা থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ১০৪ খানা আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন। এর মধ্যে ৪ খানা বড় ১০০ খানা ছোট।
আখিরাত : আখিরাত অর্থ পরকাল। মানুষের মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে আখিরাত বলা হয়। মানবজীবনের দুটি পর্যায় রয়েছে। ইহকাল ও পরকাল। ইহকাল হলো দুনিয়ার জীবন। আর মৃত্যুর পরে মানুষের যে নতুন জীবন শুরু হয় তার নাম পরকাল বা আখিরাত। আখিরাত জীবনের কয়েকটি স্তর রয়েছে। যেমন : মৃত্যু, কবর, কিয়ামত, হাশর, মিযান, সিরাত, শাফাআত, জান্নাত, জাহান্নাম প্রভৃতি।
প্রশ্ন -১ |
রাজিন মাদরাসায় পড়ালেখা করে। গ্রীষ্মের ছুটিতে মাদরাসা বন্ধ হলে সে গ্রামের বাড়িতে যায়। সে দেখল আসরের নামাযের আযান হলে তার বাবা নামায না পড়ে কাজ করছে। সে তার বাবাকে বলল বাবা তুমি নামায সম্পর্কে এত উদাসীন কেন। তার বাবা বলল, এখন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। কাজ গুছিয়ে নেওয়ার পর ভালো করে নামায পড়ব। রাজিন বলল, কত বছর তুমি বেঁচে থাকবে তার নিশ্চয়তা দিতে পার? তুমি জান! হাদিসে আছে, ‘দুনিয়া হলো আখিরাতের শস্যক্ষেত্র।’
|
ক. আখিরাত শব্দের অর্থ কী? খ. আখিরাতে বিশ্বাস করা গুরুত্বপূর্ণ কেন? গ. আখিরাতের প্রতি রাজিনের পিতার বিশ্বাস কতটুকু? ব্যাখ্যা কর। ঘ. উদ্দীপকের ঘটনার আলোকে প্রদত্ত হাদিসটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর। |
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক আখিরাত শব্দের অর্থ পরকাল।
খ তাওহিদ ও রিসালাতে বিশ্বাস করা যেমন ইমানের অঙ্গ আখিরাতে বিশ্বাস করাও তেমনি ইমানের অঙ্গ। মুমিন হওয়ার জন্য আখিরাতে বিশ্বাস অপরিহার্য। আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে দায়িত্বশীল ও সৎকর্মশীল করে তোলে। আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে জবাবদিহিতার ভয়ে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং সৎকর্মে উদ্বুদ্ধ করে। উপরিউক্ত কারণে আখিরাতে বিশ্বাস করা গুরুত্বপূর্ণ।
গ আখিরাতের প্রতি রাজিনের পিতার বিশ্বাস খুবই কম। কারণ যে ব্যক্তি আখিরাতে বিশ্বাস করে সে কখনো ঐরূপ উক্তি করতে পারে না। আখিরাতে বিশ্বাসী মানুষ বিশ্বাস করে যে, মানুষ মরণশীল এবং মানুষ কতক্ষণ বা কত দিন বেঁচে থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে আখিরাতে বিশ্বাসী মানুষ কখনো নামাযে ফাঁকি দেয় না বা ই”ছা করে নামায আদায় করা থেকে বিরত থাকে না। কারণ সে জানে প্রতি ওয়াক্ত নামায কাযা করলে বা বাদ দিলে তাকে হাজার হাজার বছর জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। আখিরাতে বিশ্বাসী মানুষ কর্মব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে নামায থেকে বিরত থাকতে পারে না।
উদ্দীপকটি পাঠ করে আমরা জানতে পারি যে, রাজিনের পিতা নামাযে খুবই উদাসীন। রাজিনের পিতা বলে, এখন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। কাজ গুছিয়ে নেবার পর ভালো করে নামায পড়ব। রাজিনের পিতার এ উক্তি প্রমাণ করে যে, আখিরাতের প্রতি তার পিতার বিশ্বাস খুবই ক্ষীণ। সুতরাং বলা যায় আখিরাতের প্রতি রাজিনের পিতার বিশ্বাস খুবই ক্ষীণ বা নেই বললেই চলে যা তাকে নামাযে উদাসীন করেছে।
ঘ মৃত্যুর পর থেকেই আখিরাতের জীবন শুরু হয়। সে জীবনের শুরু আছে, শেষ নেই। সে জীবন অনন্তকালের। মানুষ ইহজীবনে যে যেমন কাজ করবে, পরকালে সে তেমন ফল ভোগ করবে। মহানবি (স) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘দুনিয়া আখিরাতের শস্যক্ষেত্র।’ উদ্দীপকে এ হাদিসটিই উল্লিখিত হয়েছে। রাজিনের পিতা নামায আদায়ে উদাসীনতা দেখালে সে তার পিতাকে উল্লিখিত হাদিসটির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আলোচ্য ক্ষেত্রে এ হাদিসটির তাৎপর্য অপরিসীম। হাদিসটি আমাদের ইহজীবনের আমল সম্বন্ধে সতর্ক করে তোলে। কারণ হাদিসটি আমাদের বুঝতে শেখায় যে, আমাদের মন্দ কাজের জন্য আখিরাতে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে এবং ভালো কাজ পুরস্কৃত হবে। তাই আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় নিয়মিত নামায-রোযা ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় ইবাদত-বন্দেগি আমরা পালন করি। মূলত আমাদের দুনিয়ার কাজের পরিণতিই আখিরাতে ভোগ করতে হবে। সুতরাং উল্লিখিত হাদিসটি রাজিনের পিতাকে আখিরাতের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেবে এবং নিয়মিত নামায আদায়ে উৎসাহী করে তুলবে। এ উপলব্ধি থেকে রাজিনের পিতা নামাযে নিয়মিত হবে বলে আশা করা যায়। অতএব, আমাদের ব্যবহারিক জীবনে ‘দুনিয়া আখিরাতের শস্যক্ষেত্র’ হাদিসটির তাৎপর্য অপরিসীম।
প্রশ্ন – ২ |
ইউনুস সাহেব একজন পরহেজগার ব্যক্তি। তিনি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাআতের সাথে আদায় করেন, ফরজ ও নফল রোযা রাখেন। এভাবে ইসলামের প্রতিটি বিধিবিধান তিনি সঠিকভাবে পালন করেন। কিš‘ তার চারপাশের লোকেরা বিভিন্ন অন্যায়, অশ্লীল ও অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকলেও এ বিষয়ে তার কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যায় না। তার বন্ধু জনাব আবুল খায়ের একদিন তাকে বললেন, ‘মহানবি (স) এর উম্মত হিসেবে তুমি নবুয়ত ও রিসালাতের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছ। পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার জন্য নবুয়ত ও রিসালাতের শিক্ষা প্রয়োজন।’
ক. রিসালাত শব্দের অর্থ কী?
খ. রিসালাতে বিশ্বাস ¯’াপন করতে হবে কেন?
গ. নবুয়ত ও রিসালাতের উদ্দেশ্য বলতে জনাব খায়ের কোন বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার উক্ত বিষয়টি কি শিক্ষা করা প্রয়োজন? তোমার মতামত দাও।
K রিসালাত শব্দের অর্থ বার্তা, চিঠি পৌঁছানো, সংবাদ বা কোনো ভালো কাজের দায়িত্ব বহন করা।
খ ইসলামি জীবনদর্শনে রিসালাতে বিশ্বাস ¯’াপন করা অপরিহার্য। রিসালাতে বিশ্বাস না করলে কেউ মুমিন হতে পারে না। রিসালাতকে অস্বীকার করলে মহান আল্লাহকেই প্রকারান্তরে অস্বীকার করা হয়। তাই তাওহিদে বিশ্বাস ¯’াপনের ন্যায় রিসালাতেও বিশ্বাস ¯’াপন করতে হবে।
গ নবুয়ত ও রিসালাতের উদ্দেশ্য বলতে জনাব খায়ের যে বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তা হলো মানুষকে আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব, পরিচয় ও গুণাবলি সম্পর্কে জানানো বা জ্ঞান দান করা। মানুষকে সত্য ও সুন্দরের দিকে পরিচালনা করা। সর্বোপরি ইহ-পরকালীন কল্যাণ ও সফলতার দিক-নির্দেশনা প্রদান করা। আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাঁদের উদ্দেশ্যহীনভাবে দুনিয়ায় প্রেরণ করা হয়নি বরং তাঁরা নবুয়ত ও রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরা মানুষের নিকট আল্লাহ তায়ালার পরিচয় তুলে ধরতেন। সত্য ও সুন্দর জীবনের দিকে আহবান জানাতেন। পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ ও বিধিবিধান বাস্তবায়নের জন্য হাতে-কলমে শিক্ষা দিতেন। কিš‘ উদ্দীপকের ইউনুস সাহেবের কর্মকাণ্ডে রিসালাতের এ উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটেনি। তিনি তার চারপাশের লোকদের সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করেননি এবং অন্যায়, অনৈতিক কাজ করতে নিষেধ করেননি; যা ছিল রিসালাতের অন্যতম উদ্দেশ্য। উদ্দীপকে জনাব খায়ের এ বিষয়ের প্রতিই ইঙ্গিত করেন। প্রকৃতপক্ষে রিসালাতের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না হলে কোনো ইবাদতেরই মূল্য নেই।
ঘ আমি মনে করি পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার জন্য উক্ত বিষয় তথা নবুয়ত ও রিসালাত শিক্ষা করা প্রয়োজন। আল্লাহ তায়ালার বাণী ও শিক্ষা মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়াকে নবুয়ত ও রিসালাত বলা হয়। নবুয়ত ও রিসালাতের শিক্ষা মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল কাজকর্ম আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত পথে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। তাই যে ব্যক্তি নবুয়ত ও রিসালাতের শিক্ষানুসারে জীবনযাপন করে সেই সফল। নবি-রাসুলগণ ছিলেন পরিপূর্ণ মানুষ। কারণ তারা ছিলেন উত্তম চরিত্রের অধিকারী। কোনো রকম অন্যায়-অত্যাচার, অশ্লীলতা এবং অনৈতিকতাকে তারা প্রশ্রয় দিতেন না। তারা মানুষকে সৎপথে পরিচালনা করতেন এবং অসৎকাজে বাধা দিতেন। নবির উম্মতদের মধ্যে যারা রিসালাতের এ শিক্ষার পূর্ণ অনুসরণ করবেন তারাই সফল ও শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত হবেন। উদ্দীপকের ইউনুস সাহেবের চরিত্রে আমরা ভিন্ন চিত্র দেখতে পাই। তিনি আল্লাহর ইবাদত করেন ঠিকই, কিš‘ মানুষকে সত্য ও সুন্দরের দিকে পরিচালনা করেন না। অর্থাৎ তিনি নবি-রাসুলদের আংশিক অনুসরণ করেছেন। আর নবি-রাসুলদের পূর্ণ অনুসরণ না করার ফলে তিনি পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারেননি। এভাবে দেখা যায়, যে ব্যক্তি নবুয়ত ও রিসালাতের শিক্ষানুসারে জীবনযাপন করেন তিনিই পরিপূর্ণ মানুষ। সুতরাং পরিপূর্ণ মুমিন হতে হলে ইউনুস সাহেবকে নবুয়ত ও রিসালাত শিক্ষা করে তদনুযাযী আমল করতে হবে।
প্রশ্ন – ৩ |
জনাব মামুন অনৈতিক কার্যকলাপের দরুন চরম অধঃপতনে রয়েছেন। পরিবার, সমাজ কোথাও তার ন্যূনতম সম্মান নেই। সবাই তাকে একজন চরিত্রহীন মানুষ হিসেবে জানে। ইবাদত বন্দেগির তিনি ধার ধারে না। ইহকাল ও পরকাল তার কাছে সমান। কিন্তু‘ ইদানিং মানুষের অবহেলা ও উপেক্ষা তার ভেতর পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এখন তিনি সঠিক পথে আসতে চান। কিন্তু‘ পথ খুঁজে পা”চ্ছেন না। জনাব ইউনুস শুনে বললেন, চরিত্রবান হতে হলে আখিরাতে বিশ্বাসী হও। আখিরাতে অবিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের চরম শাস্তি।
ক.মিযান কাকে বলে?
খ.মহানবি (স) কে ‘খাতামুন নাবিয়্যিন’ বলা হয় কেন?
গ.চরিত্রবান হওয়ার জন্য জনাব মামুনের আখিরাতে বিশ্বাসী হওয়া প্রয়োজন কেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. জনাব ইউনুসের সর্বশেষ উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক হাশরের ময়দানে মানুষের আমলসমূহ ওজন করার জন্য আল্লাহ তায়ালা যে পাল্লা প্রতিষ্ঠা করবেন তাকে মিযান বলা হয়।
খ আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (স) কে ‘খাতামুন নাবিয়্যিন’ বলা হয়। কারণ খাতামুন নাবিয়্যিন অর্থ সর্বশেষ নবি। যেহেতু মহানবি (স) সর্বশেষ নবি এবং তাঁর পরে আর কোনো নবি নেই এমনকি কিয়ামত পর্যন্ত কোনো নবি-রাসুলও আসবেন না এ জন্য তাকে খাতামুন নাবিয়্যিন বা সর্বশেষ নবি বলা হয়।
গ চরিত্রবান হওয়ার জন্য জনাব মামুনের আখিরাতে বিশ্বাসী হওয়া প্রয়োজন। মানুষের মাঝে যখন আখিরাতে বিশ^াস থাকে না তখন সে সত্য পথ থেকে দূরে সরে যায়। সে বিশ্বাস করে না যে তার প্রতিটি কাজের জন্য তাকে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে। আর এভাবে আখিরাতে অবিশ্বাস মানবসমাজে অত্যাচার ও পাপাচার বৃদ্ধি করে। উদ্দীপকে বর্ণিত জনাব মামুনের ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসের অভাবের কারণে তার নৈতিক অধঃপতন ঘটেছে। তিনি যদি আখিরাতে বিশ্বাসী হতেন তাহলে তিনি অবশ্যই জানতেন এসব কাজের জন্য তাকে একদিন আল্লাহর দরবারে হিসাব দিতে হবে। তাহলে তিনি এসব কিছুই করতেন না। কাজেই জনাব মামুনের অবশ্যই চরিত্রবান হওয়ার জন্য আখিরাতে বিশ্বাস প্রয়োজন।
ঘ জনাব ইউনুস বলেছেন, আখিরাতে অবিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের চরম শাস্তি। উক্তিটি যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত। জাহান্নাম হলো শাস্তির ¯’স্থান। এর শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। মানুষের পাপের পরিমাণ অনুসারে তাদের সেথায় শাস্তি দেওয়া হবে। আখিরাতে অবিশ্বাসীদের জাহান্নামেই শাস্তি ভোগ করতে হবে। কারণ মানুষ তখনই পাপাচার ও অশ্লীলতায় নিমজ্জিত হয় যখন সে আখিরাতে অবিশ্বাসী হয়। সে সুযোগ পেলেই পাপাচার ও অশ্লীল কাজে জড়িয়ে অবিশ্বাসী হয়। অথচ সে যদি আখিরাতে বিশ্বাস করত তাহলে কবর, হাশর, কিয়ামত, পুলসিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি সব কিছুতেই বিশ্বাস করত। আর এসবের প্রতি বিশ্বাসের ফলে সৎকর্মে আগ্রহী হয়ে পাপাচার বর্জন করত। জান্নাত লাভের আশায় নিজেকে সৎকর্মশীল করে তুলত। নেক কাজ ও ভালো কাজে উৎসাহী হয়ে উঠত। অন্যদিকে জাহান্নামের শাস্তির ভয়ে অন্যায় ও পাপাচার থেকে বিরত থাকত। কিš‘ সে যখন আখিরাতকে বিশ্বাস করেনি কাজেই তার জন্য নির্ধারিত রয়েছে জাহান্নাম। আর জাহান্নাম হ”েছ চরম শাস্তির ¯’ান। সতরাং উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে এককথা বলা যায় যে, জনাব ইউনুসের সর্বশেষ উক্তি “আখিরাতে অবিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের চরম শাস্তি।” উক্তিটি যথার্থ।
প্রশ্ন ১ রিসালাত কী?
উত্তর : মহান আল্লাহ তায়ালার পবিত্র বাণী মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বকে রিসালাত বলা হয়।
প্রশ্ন ২ রিসালাতের ধারা কী?
উত্তর : নবি-রাসুলদের আগমনের ধারাবাহিকতাকে নবুয়ত ও রিসালাতের ক্রমধারা বলা হয়।
প্রশ্ন ৩ খাতামুন শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : খাতামুন শব্দের অর্থ শেষ, সমাপ্তি, সীলমোহর ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৪ নবি-রাসুলগণ কেমন ছিলেন?
উত্তর : নবি-রাসুলগণ ছিলেন নিষ্পাপ ও সৎগুণের অধিকারী।
প্রশ্ন ৫ আসমানি কিতাব কাকে বলে?
উত্তর : আল্লাহ তায়ালার বাণী সংবলিত গ্রন্থ’বলিকে আসমানি কিতাব বলে।
প্রশ্ন ৬ প্রসিদ্ধ আসমানি কিতাব কয়খানা?
উত্তর : প্রসিদ্ধ আসমানি কিতাব চারখানা।
প্রশ্ন ৭ সহিফার সংখ্যা কত?
উত্তর : সহিফা মোট ১০০ খানা।
প্রশ্ন ৭ হাশর কী?
উত্তর : হাশর হলো মহাসমাবেশ।
প্রশ্ন ৮ মিযান কাকে বলে?
উত্তর : হাশরের ময়দানে মানুষের আমলসমূহ ওজন করার জন্য আল্লাহ তায়ালা যে পাল্লা প্রতিষ্ঠা করবেন তাকে মিযান বলা হয়।
প্রশ্ন ৯ হযরত আদম (আ)-এর উপর কয় খানা সহিফা নাজিল হয়?
উত্তর : হযরত আদম (আ)-এর ওপর ১০ খানা সহিফা নাজিল হয়।
প্রশ্ন ১০ ৫০ খানা সহিফা নাজিল হয় কার ওপর?
উত্তর : ৫০ খানা সহিফা নাজিল হয় হযরত শিস (আ)-এর ওপর।
প্রশ্ন ১১ তাওরাত কার ওপর নাজিল হয়?
উত্তর : তাওরাত হযরত মুসা (আ)-এর ওপর নাজিল হয়।
প্রশ্ন ১২ আল্লাহর বাণী সংবলিত ছোট পুস্তিকাকে কী বলে?
উত্তর : আল্লাহর বাণী সংবলিত ছোট পুস্তিকাকে ‘সহিফা’ বলে।
প্রশ্ন ১৩ হযরত ঈসা (আ)-এর ওপর কোন কিতাব নাজিল হয়েছিল?
উত্তর : হযরত ঈসা (আ)-এর ওপর নাজিল হয়েছিল ইনজিল।
প্রশ্ন ১৪ আল-কুরআন কী?
উত্তর : আল-কুরআন হলো সর্বশেষ আসমানি কিতাব। এটি সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস।
প্রশ্ন ১৫ আখিরাত শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : আখিরাত শব্দের অর্থ পরকাল।
প্রশ্ন ১৬ আখিরাত কাকে বলে?
উত্তর : মানুষের মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে আখিরাত বলা হয়।
প্রশ্ন ১৭ আখিরাতের গুরুত্ব কতটুকু?
উত্তর : ইসলামি জীবনদর্শনে আখিরাতে বিশ্বাস¯’স্থাপন অপরিহার্য।
প্রশ্ন ১৮ আখিরাতে বিশ্বাস না করলে কী হয়?
উত্তর : আখিরাতে বিশ্বাস ছাড়া মুমিন হওয়া যায় না।
প্রশ্ন ১৯ আখিরাতের জীবন কখন শুরু হয়?
উত্তর : আখিরাতের জীবন মৃত্যুর সাথে সাথে শুরু হয়।
প্রশ্ন ২০ আখিরাতের জীবনের শুরু হয় কিসের মাধ্যমে?
উত্তর : আখিরাত বা পরকালের জীবনের শুরু হয় মৃত্যুর মাধ্যমে।
প্রশ্ন ১ মানবজীবনে নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশে রিসালাত কীভাবে ভূমিকা পালন করে?/রিসালাত বিশ্বাস করা প্রয়োজনীয় কেন? /রিসালাতে বিশ্বাস করা অপরিহার্য কেন?
উত্তর: নবুয়ত ও রিসালাতের শিক্ষা মানুষকে শান্তি ও শৃঙ্খলার দিকে পরিচালনা করে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের সকল কাজকর্ম আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত পথে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। নবুয়ত ও রিসালাতের চেতনা মানুষের মধ্যকার সমস্ত খারাপ অভ্যাস, অশ্লীলতা ও মন্দকর্মের চর্চা দূর করে দেয়। মানুষ সৎ ও সুন্দর জীবনযাপনে উৎসাহিত হয়। মানুষ নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত হয়।
নবুয়ত ও রিসালাত মানুষকে নবি-রাসুলগণের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে। নবি-রাসুলগণ ছিলেন নিষ্পাপ এবং সকল সৎগুণের অধিকারী। তাঁদের আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের জীবন ও চরিত্র উত্তম হয়। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ বিকশিত হয়। মানবসমাজে পশুত্বের পরিবর্তে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে।
প্রশ্ন ২ আসমানি কিতাবের বিষয়বস্তু‘ উল্লেখ কর।
উত্তর: আল্লাহ তায়ালা আসমানি কিতাবসমূহে নানা বিষয়ে আলোচনা করেছেন। যেমন :
ক.আল্লাহ তায়ালার সত্তাগত পরিচয়।
খ.আল্লাহ তায়ালার গুণাবলির বর্ণনা।
গ.নবি-রাসুলগণের বর্ণনা।
ঘ.পূর্ববর্তী জাতিসমূহের বিবরণ।
ঙ.অবাধ্য ও কাফিরদের পরিণতির বিবরণ।
চ.হালাল-হারামের বর্ণনা।
ছ.বিধি-বিধান সংক্রান্ত বিবরণ।
জ.শাস্তি ও সতর্কীকরণ বিষয়ে আলোচনা।
ঝ.উপদেশ ও সুসংবাদ সম্পর্কে বিবরণ।
ঞ.আকিদা সংক্রান্ত বিষয়সমূহের বিবরণ।
ট.পরকাল সংক্রান্ত বিষয়সমূহের বিবরণ ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৩ আমরা আসমানি কিতাব অনুসরণ করব কেন?/মূলত আসমানি কিতাব জ্ঞানের সর্বোত্তম উৎস- মূল্যায়ন কর।
উত্তর: আসমানি কিতাবে মানুষকে নীতি-নৈতিকতার আদর্শ অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব গ্রন্থে’ উন্নত আদর্শ ও সদগুণাবলির নানা বিষয় অত্যন্ত সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে। পাশাপাশি যেসব কাজ ও অভ্যাসের দ্বারা নৈতিক জীবনাচরণ লঙ্ঘিত হয় সে সম্পর্কে সতর্ক ও নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। আসমানি কিতাব মানুষকে সব ধরনের কল্যাণের পথ নির্দেশ করে। এ কিতাব অনুসরণে জীবন পরিচালনা করলে মানবজীবন নীতিনৈতিকতামণ্ডিত, সুন্দর ও শান্তিময় হয়। এজন্য আমরা আসমানি কিতাব অনুসরণ করব।
প্রশ্ন ৪ সৎকর্মশীল ও নৈতিকজীবন গঠনে আখিরাতে বিশ্বাসের ভূমিকা আলোচনা কর।/আখিরাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব/আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস কেন প্রয়োজন?
উত্তর : সৎকর্মশীল ও নৈতিকজীবন গঠনে আখিরাতে বিশ্বাসের ভূমিকা অপরিসীম। আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে জীবন পরিচালনায় নীতি ও আদর্শের অনুসরণ করতে বাধ্য করে। যে ব্যক্তি আখিরাতে বিশ্বাস করে সে প্রত্যহ তার প্রতিটি কাজের হিসাব নিজেই নিয়ে থাকে। এভাবে দৈনন্দিন আত্মসমালোচনার মাধ্যমে মানুষ তার ভুলত্রুটি সংশোধন করে স”চরিত্রবান হিসেবে গড়ে ওঠে। আখিরাতে পুণ্যবানদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। জান্নাত লাভের আশা মানুষকে দুনিয়ার জীবনে সৎকর্মশীল করে তোলে। মোটকথা, আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে ছোট-বড়, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব ধরনের অন্যায় হতে বিরত রাখে এবং পাপমুক্ত, সৎকর্মশীল ও নৈতিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করে।
প্রশ্ন ৫ ‘দুনিয়া হলো আখিরাতের শস্যক্ষেত্র’- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মানুষ শস্যক্ষেতে যেরূপ চাষাবাদ করে, বীজ বপন করে, যেভাবে পরিচর্যা করে ঠিক সেরূপই ফল লাভ করে। যদি কোনো ব্যক্তি তার শস্যক্ষেতের পরিচর্যা না করে তবে সে ভালো ফসল লাভ করে না। তদ্রুপ দুনিয়ার কাজকর্মের প্রতিদান আখিরাতে দেওয়া হবে? দুনিয়াতে ভালো কাজ করলে আখিরাতে মানুষ পুরস্কৃত হবে। আর মন্দ কাজ করলে শাস্তি ভোগ করবে।
(আমরা যদি লক্ষ্য করি তবে দেখতে পারি যে মূলত এই সাজেশন এ পুরোটাই আমরা রিসালাত ও আখিরাত এই দুইটি বিষয় এর উপর গুরুত্ব দিয়েছি। এবং পুরো লেকচারটি পড়লে দেখা যাবে যে এই দুইটি বিষয় এর উপর ভিত্তি করেই আমরা একই প্রশ্ন বিভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করেছি যাতে আপনাদের বিস্তারিত পড়া হয়। কেও চাইলে জ্ঞানমূলক ও অনুধাবনমূলক বাদে যেকোনো একট সৃজনশীল প্রশ্নের গ ও ঘ এর উত্তর শিখেই পরীক্ষায় উত্তর দিতে পারে।)
01723-474442